তবে গ্রিডের-বিদ্যুতের তুলনায় মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুতের ব্যয় বেশি উল্লেখ করে টেকসই ও নবায়নযোগ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) বলেছে, গ্রিড বিদ্যুতের ৫০-ইউনিট গ্রাহকের প্রতি ইউনিটে ৩.৭৫ টাকা ব্যয় হয়, তাহলে একটি মিনি-গ্রিড গ্রাহকের জন্য এটি হবে ১৮-৩৫ টাকা।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৬টি সোলার মিনি-গ্রিড এখনও পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাথমিক হিসাব মতে, এসব মিনি গ্রিডগুলোর মোট সম্পদের মূল্য ১০৯ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যুক্ত হলো হুয়াওয়ের স্মার্ট ফটোভোলটাইক
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন-প্রসারে কাজ করা স্রেডা আগামী একমাসের মধ্যে সারা দেশে সোলার মিনি গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের পদ্ধতি এবং অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে পারে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ক্রয়ের পদ্ধতি ও ব্যয় বা শুল্ক-সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু বিষয় নিষ্পত্তি করতে আগামী দুই সপ্তাহ ধরে স্ট্রেকহোল্ডারদের সাথে বসবে স্রেডা কর্তৃপক্ষ।
যোগাযোগ করা হলে স্রেডা চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের ইতিমধ্যে কিছু বিষয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তিতে আমাদের আরও আলোচনা করা দরকার।’
আরও পড়ুন: মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন
স্রেডার পরিসংখ্যান অনুসারে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বর্তমানে দেশে ৬৪৯.৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।তবে এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট।
বর্তমানে উৎপাদিত ৬৪৯.৬১ মেগাওয়াটের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ থেকে ৪১৫.৬৮ মেগাওয়াট, বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ০.৯ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ০.৬৩ মেগাওয়াট এবং বায়োমাস থেকে ০.৪ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে।
‘জাতীয় সৌর বিদ্যুৎ কর্ম পারিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ এর ওপর স্রেডা পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, কর্মপরিকল্পনায় যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করলে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ সহজেই ২০৪১ সালের মধ্যে সৌর শক্তি থেকে ৪০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যথারীতি ব্যবসায়িক পরিস্থিতি হিসাবে’ ৮,০০০ মেগাওয়াট এবং ‘মাঝারি ক্ষেত্রে’ ২৫,০০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে।
‘সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে নেয়া’
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে মিনি গ্রিড স্থাপনকারী বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে সরকার ওই মিনি গ্রিডের বিদ্যুৎ ক্রয়ের পদক্ষেপ নিয়েছে।
তারা বলেছে, এই ধরনের মিনি-গ্রিড থেকে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ গ্রিডের সাথে যুক্ত না হয়েই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প অনুমোদন
কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের ‘রিমোট এরিয়া পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম (আরএপিএসএস)’ নীতির আলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্থা লিমিটেড (আইডিসিওএল) এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে অল্প সুদে ঋণ নিয়ে এসব মিনি গ্রিড স্থাপন করেছে। তবে প্রচলিত বিদ্যুতের তুলনায় তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যয় অনেক বেশি।
তারপরও মিনি-গ্রিড অপারেটরগুলো সেই অঞ্চলগুলোতে গ্রিড সম্প্রসারণের পরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা আইডিসিএল-এর আর্থিক সহায়তায় ২০ বছর মেয়াদে অফ-গ্রিড অঞ্চলে স্থাপন করেছে। আর এসব স্থাপনায় আইডিসিওএল ৮০ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ২০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে।
আরও পড়ুন: পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে প্রস্তুত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র
স্থাপনাগুলো বা মিনি-গ্রিডগুলো বাস্তবায়নের সময়ৎ সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল যে, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো ২০ বছরের প্রকল্প মেয়াদে তাদের পরিষেবা দিয়ে এই অঞ্চলে পৌঁছাবে না।
তবে বিতরণ ইউটিলিটিগুলো বিশেষত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) স্থানীয় সাংসদদের রাজনৈতিক চাপের মধ্যে সেসব অঞ্চলে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছে।
সরকারি ইউটিলিটিগুলো যখন এই অঞ্চলগুলিতে স্থানান্তরিত হয়, তখন মিনি-গ্রিডের গ্রাহকরা মিনি গ্রিড থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিকল্প বেছে নেন। এতে করে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেন বিনিয়োগকারীরা।
এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মিনি গ্রিডের গ্রাহকরা গ্রিড-অঞ্চলে প্রযোজ্য একই শুল্কে মিনি-গ্রিড অপারেটরগুলোকে বিল দিতে পারবেন।
এতে করে মিনি গ্রিড অপারেটররা আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন না, কারণ সেই অঞ্চলগুলোর সংশ্লিষ্ট ইউটিলিটিগুলো মিনি গ্রিড অপারেটরদের আর্থিক ক্ষয় হ্রাস করবে।
সরকারি সূত্র জানায়, সরকারি ইউটিলিটিগুলো যদি এই মিনি-গ্রিডগুলো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে, তবে মিনি গ্রিডের স্পনসরগুলোকে অর্থ ব্যয় করতে প্রায় ১৯ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।
‘এটি গ্রিড এবং অফ-গ্রিড গ্রাহকদের মধ্যে সমতা আনবে। কারণ সরকার সাধারণ ব্যয়বহুলের জন্য শুল্কের অসঙ্গতিগুলো সরিয়ে নিতে চায়,’ বলেন মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন।
আইডিসিওএল এর নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের প্রধান এনামুল করিম পাভেল বলেন, ‘যদি এই বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী এবং আইডিসিওএল উভয়ের বিনিয়োগ বাঁচাতে সহায়তা করবে।’
গত জুলাইয়ে এক ওয়েবিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
‘আমরা নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুত উৎপান করার লক্ষ্য রেখেছি,’ বলেন তিনি।
গত মাসে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ২০৪১ সারের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট থেকে কমিয়ে ৩০,০০০ মেগাওয়াট করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সাথে ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ এর মতো পরিকল্পনাগুলোর সাথেও যুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ সংস্থা এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ অপরিহার্য।